ঢাকা ০৬:১৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর

নাগরিক প্রতিদিন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৫:৩৩:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ৪৮৯ বার পড়া হয়েছে
Nagorik Pratidin অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নাগরিক প্রতিদিন এর আজকের আয়োজনে রয়েছে চাঁদপুর জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। উপজেলার সংখ্যানুসারে চাঁদপুর বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণিভুক্ত জেলা। পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থলে এ জেলা অবস্থিত। ইলিশ মাছের অন্যতম প্রজনন অঞ্চল হিসেবে চাঁদপুরকে “ইলিশের বাড়ি” নামে ডাকা হয়। রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ৯৬ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ২০৮ কিলোমিটার। এ জেলার দক্ষিণে লক্ষ্মীপুর জেলা ও নোয়াখালী জেলা; পূর্বে কুমিল্লা জেলা, উত্তরে কুমিল্লা জেলা, মেঘনা নদী ও মুন্সীগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে মেঘনা নদী, মুন্সীগঞ্জ জেলা, শরীয়তপুর জেলা ও বরিশাল জেলা অবস্থিত। পদ্মা ও মেঘনা নদী দুটি চাঁদপুর শহরের কাছে এসে মিলেছে।
১৮৭৮ সালে ত্রিপুরা জেলা (পরবর্তীতে যা কুমিল্লা নামে পরিচিত) যে তিনটি মহকুমা নিয়ে গঠিত হয়, তার মধ্যে চাঁদপুর অন্যতম। ১৯৮৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুর জেলায় উন্নীত হয়।
বার ভূঁইয়াদের আমলে চাঁদপুর অঞ্চল বিক্রমপুরের জমিদার চাঁদরায়ের দখলে ছিল। এ অঞ্চলে তিনি একটি শাসনকেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। ঐতিহাসিক জে এম সেনগুপ্তের মতে, চাঁদরায়ের নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম হয়েছে চাঁদপুর।
অন্যমতে, চাঁদপুর শহরের (কোড়ালিয়া) পুরিন্দপুর মহল্লার চাঁদ ফকিরের নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম চাঁদপুর। কারো মতে, শাহ আহমেদ চাঁদ নামে একজন প্রশাসক দিল্লী থেকে পঞ্চদশ শতকে এখানে এসে একটি নদী বন্দর স্থাপন করেছিলেন। তার নামানুসারে নাম হয়েছে চাঁদপুর।
মুক্তিযুদ্ধের সময় চাঁদপুর ২নং সেক্টরের অধীনে ছিল। মুক্তিযুদ্ধের স্মারক হিসেবে অঙ্গীকার (ভাস্কর্য), ফরিদগঞ্জ উপজেলার শহীদদের নাম ও ঠিকানা উৎকীর্ণ স্মৃতিফলক আমরা তোমাদের ভুলব না, মতলবের দীপ্ত বাংলাদেশ, চান্দ্রাকান্দি স্মৃতিসৌধ (সাদুল্লাহপুর, মতলব)। রঘুনাথপুর বাজার (হাজীগঞ্জ), হামিদিয়া জুট মিলস প্রাঙ্গণ, রায়শ্রী উত্তর ও দক্ষিণে বধ্যভূমি এবং গণকবর আছে নাসিরকোট (হাজীগঞ্জ)।
দেশ-বিদেশে চাঁদপুরকে বিশেষভাবে উপস্থাপনের জন্য ২০১৫ সালের আগস্ট মাস হতে জেলা ব্র্যান্ডিং কার্যক্রম শুরু করেন তৎকালিন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুস সবুর মণ্ডল। ইলিশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এর ব্র্যান্ডিং নাম দেন ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর । ২০১৭ সালে বাংলাদেশের প্রথম ব্র্যান্ডিং জেলা হিসেবে চাঁদপুরকে স্বীকৃতি দেয়। এ নামানুসারে একটি লোগো রয়েছে, যা অঙ্কন করেছেন এ জেলার সন্তান বরেণ্য চিত্রশিল্পী হাশেম খান। একইসাথে ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর এর রূপকার হিসেবে স্বীকৃতি পান তৎকালিন (২০১৫-২০১৮) জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুস সবুর মণ্ডল।
চাঁদপুর জেলা নদীর জেলা হিসেবে পরিচিত। এখানে জালের মতো বিস্তৃত আছে অনেক নদী। এ জেলার প্রধান ৪টি নদী হল মেঘনা, পদ্মা, ডাকাতিয়া ও ধনাগোদা নদী। চাঁদপুর জেলায় যোগাযোগের প্রধান সড়ক হল ঢাকা-চাঁদপুর মহাসড়ক এবং চট্টগ্রাম-চাঁদপুর মহাসড়ক। শুধুমাত্র চাঁদপুর জেলার জন্য আলাদা একটি রেলপথ রয়েছে, যার মাধ্যমে প্রতিদিন চাঁদপুর-চট্টগ্রাম এবং চাঁদপুর-কুমিল্লার আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন জেলা শহর থেকে নৌপথে যোগাযোগের জন্যে রয়েছে চাঁদপুর নদী বন্দর।

চাঁদপুর জেলার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ

মিনি কক্সবাজার, চাঁদপুরঃ মেঘনার চর বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলায় রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত একটি পর্যটনকেন্দ্র। এটি নদীকেন্দ্রিক বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যটন কেন্দ্র। এর চারদিকে নদী হওয়ায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মতো দেখায় তাই পর্যটকরা এর নাম দিয়েছেন মেঘনার চর। স্থানীয়ভাবে বালু চর, পদ্মার চর ও মেঘনার চর নামেও এর পরিচিতি রয়েছে। বেসরকারিভাবে “স্বপ্ন ট্যুরিজম” নামক প্রতিষ্ঠান এই পর্যটনকেন্দ্রটি পরিচালনা করে।
চারদিকে নদী ও দূর থেকে স্থানটি দক্ষিণ পূর্বাংশে চাঁদপুর জেলা শহরকে এবং এর বিপরীত দিকে ছোট আকৃতিতে শরীয়তপুর জেলাকে অনুধাবন করা পর্যটন কেন্দ্রের বিশেষ আকর্ষণ। শীত মৌসুমে এবং গ্রীষ্মের আগ পর্যন্ত এ পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের মন কাড়ে] এ স্থানটি পদ্মা ও মেঘনার মিলনস্থলে অবস্থান হওয়া দু’দিকে মেঘনা ও পদ্মার বিস্তীর্ণ জলরাশির ছোট ছোট ঢেউ আর বালুকাময় বিস্তীর্ণ চরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা এখানে ভিড় করে। সকালে বা বিকেলে এসে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উভয়টির দৃশ্যই এখান থেকে দেখা যায়। দু’দিক থেকে দু’নদীর ছোট ছোট ঢেউ আছড়ে পড়া, পদ্মা-মেঘনায় জেলেদের ইলিশ ধরার দৃশ্য আর বিস্তীর্ণ বালির ফাঁকে সবুজ ঘাস মিনি কক্সবাজার বিশেষ সৌন্দর্য। এছাড়া জনপ্রিয় স্থানটিতে পর্যটকদের জন্যে মেঘনা ও পদ্মা নদীর মিঠা পানিতে সাঁতারের পাশাপাাশি ও গোসলের সুযোগ রয়েছে।
বর্ষার সময় সাঁতার না-জানা পর্যটকদের জন্য মিনি কক্সবাজার ঝুঁকিপূর্ণ। ১২ জুন ২০১৯ তারিখে এখানে সাঁতার কাটতে গিয়ে একজন পর্যটক নিখোঁজ হন।১৩ জুন ২০১৯ তারিখে চাঁদপুর নদী ফায়ার সার্ভিস, বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ড সদস্যরা তার লাশ উদ্ধার করে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এ পর্যটনকেন্দ্রকে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের জন্যেও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখছে।

হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ (৬ষ্ঠ বৃহত্তম)ঃ হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ এর অবস্থান চাঁদপুর জেলার উপজেলার হাজীগঞ্জ বাজারের মধ্যবর্তী স্থানে। এটি হাজীগঞ্জ মৌজায় পড়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে আলীয়া মাদ্রাসা, হাফেজীয়া মাদ্রাসা, ফোরকানীয়া মাদ্রাসা ও ইসলামীয়া পাঠাগার। মসজিদটি দুই তলা বিশিষ্ট, ১টি 121 ফুট লম্বা মিনার ও ২টি গুম্বজ রয়েছে।

হযরত শাহরাস্তি (রহ.) এর মাজারঃ চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলাধীন শ্রীপুর গ্রামে হযরত রাস্তি শাহ্‌ (রহ.)-এর মাজার অবস্থিত।
মাজার সংলগ্ন একটি অতি প্রাচীন তিন গম্বুজ মসজিদ রয়েছে। রাস্তি শাহের মৃত্যুর সাড়ে তিনশ’ বছর পর সুবেদার শায়েস্তা খানের কন্যা পরী বিবির আদেশে কাজী গোলাম রসুল এটি নির্মাণ করেন। সম্রাটফিরোজ শাহ তুঘলক (১৩৫১-১৩৮৮)-এর আমলে মাজারের ব্যয় নির্বাহ করার জন্য সরকার ৬৪ একর সম্পত্তি লাখেরাজ দান করেন; যা শ্রীপুরে তার বংশধরগণ বংশ পরম্পরায় দেখাশুনা করে আসছেন। মাজার রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্যে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বার্ষিক দু’শ’ দশ টাকা হারে অনুদান (ভাতা) দিতো; তবে পরবর্তীতে কুমিল্লার ডিএম (ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট) হেনরী মেডকাফের সাথে রাস্তি শাহের উত্তরসুরি গোলাম রেজার বিরোধ সৃষ্টি হলে তা বন্ধ হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে তা মীমাংসা হলে তখন থেকে অদ্যাবধি তার বংশধরগণ সরকার থেকে দু’শ দশ টাকা হারে বার্ষিক ভাতা পান।
প্রতি বছর মাঘ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার এখানে বার্ষিক সম্মেলন (ওরস) অনুষ্ঠিত হয়; যাতে দেশ-বিদেশ হতে প্রচুর লোক সমাগম ঘটে।

সাচার রথঃ সাচার কচুয়ার রথটি অতি প্রাচীন।সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিকট তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। প্রতিবছর এই রথকে কেন্দ্র করে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এটি বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার সাচার বাজারে অবস্থিত।অলৌকিক ভাবে দর্শন প্রাপ্ত এ নিম কাঠ দ্বারা জগ্ননাথ, বলরাম ও শুভদ্রা এ তিনজনের তিনটি মূর্তি তৈরি হয়। গঙ্গা গোবিন্দ সেনের নেতৃত্বে তৎকালীন বঙ্গের বিখ্যাত নির্মাতা কারিগর রামকান্ত নিম কাঠ খোদাই পদ্ধতিতে মূর্তি গুলো তৈরি করেন। বলরাম জগন্নাথের বড় ভাই এবং শুভদ্রা ছোট বোন। জগন্নাথ ধামের ক’গজ সম্মূখে নিম কাঠের সাহায্যেই ১২টি চাকার উপর প্রায় ৪০ ফুট উচুঁ বিশিষ্ট অভিনব কারুকার্য খচিত রথ নির্মিত হয়। নিম কাঠে খোদাই পদ্ধতিতে বিভিন্ন আকর্ষনীয় মূর্তি তৈরি করা হয়। এসব মূর্তির মাঝে চুল বেঁধে রেখে বউ কে কাধে তুলে রাখা, পুরুষের প্রস্রাব পানে উদ্যত্ব যুবতী ষাড়ের উপর গাভী চড়ায় ও মাকে ছেলে ধর্ষন করছে ইত্যাদি নিখুত মূর্তি গুলো সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। অর্থ্যাৎ সত্য, দ্বাপর ত্রেতা ও কলিযুগের ঘটমান মানুষের আচরনের বিভিন্ন অঙ্কিত স্মৃতি নিয়ে এ রথ নির্মিত হয়।

মনসা মুড়াঃ মনসা মুড়াটি চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার ৪নং পূর্ব সহদেবপুর ইউনিয়নের ভূইয়ারা গ্রামে অবস্থিত। ভুইয়ারা হাইস্কুল হতে প্রায় ৩০০ মিটার পূর্বে কচুয়া-সাচার সড়ক হতে অর্ধ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং সুন্দরী খালের উত্তর পাশে খোলা মাঠে অবস্থিত ২১টি বাঁশ ঝাড় নিয়ে গঠিত এই মনসা মুড়াটিকে পরিকল্পিত বাগান বলে মনে হয়। জনশ্রুতি রয়েছে, বাসর ঘরে সর্প দংশনের পর মৃত স্বামী লক্ষীন্দরকে সাগরে ভেলায় ভাসিয়ে চলার পথে এক পর্যায়ে ভেলাটি ভুইয়ারা গ্রামে ভিড়ে (ভুইয়ারা গ্রাম এককালে উপকূল এলাকা ছিল বলে কথিত রয়েছে)। সেই ভেলায় ব্যবহৃত কাঁচা বাঁশ থেকে শিস বেরিয়ে বর্তমানের এ মনসা মুড়ার সৃষ্টি হয়। জানা গেছে, এলাকার হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোকজন বিভিন্ন উদ্দেশ্য সফল করতে এ মনসা মুড়ায় দুধ ও কলা দিয়ে থাকে (মানত্ করে)। একসময় ভুইয়ারা গ্রামের লোদ বংশীয় লোকেরা মনসা মুড়ার রক্ষণাবেক্ষণসহ পূজা-অর্চনা করত। ১৯৬৮ সালে এই বংশের লোকজন ভারতে চলে যাওয়ার সময় পাশের মেঘদাইর গ্রামের গোবিন্দ কবিরাজের স্ত্রী যমুনা সুন্দরীকে মনসা মুড়া রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়ে যায়। এর পর যমুনা সুন্দরীর তিরোধানের পর তার পুত্রবধূ নীলা চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে এ মনসা মুড়ায় পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে

মেঘনা নদীর তীরঃ মেঘনা নদী বা মেঘনা আপার নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, ভোলা এবং লক্ষ্মীপুর জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৫৬ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৩৪০০ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। মেঘনা চাঁদপুরের মোহনা থেকে শুরু করেই সবথেকে বেশী খরস্রোতা হয়েছে এবং মেঘনা ভোলার শুরু থেকে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত প্রায় ১০০কি:মি: প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক মেঘনা আপার নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ১৭। মেঘনা বাংলাদেশের গভীরতম ও প্রশস্ততম নদী এবং অন্যতম বৃহৎ ও প্রধান নদী।

লোহাগড় মঠঃ লোহাগড় মঠ হল বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলায় অবস্থিত একমাত্র মঠ।[১] প্রায় চার থেকে সাত শতাব্দী পুরাতন প্রাচীন এই মঠ চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার লোহাগড় গ্রামে ডাকাতিয়া নদীর পাশে অবস্থিত। যা লোহাগড় জমিদার বাড়ির জমিদাররা তৈরি করেছিলেন। দর্শনীয় স্থান হিসেবে তুলাতুলী মঠ, নাওড়া মঠ, মঠখোলার মঠ, যাত্রা মুনির মঠ, সত্যরাম মজুমদারের মঠ উল্লেখযোগ্য।

লোহাগড় জমিদার বাড়িঃ লোহাগড় জমিদার বাড়ি বাংলাদেশ এর চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার লোহাগড় গ্রামে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। তবে এই জমিদার বাড়ির জমিদারদের তৈরি করা জমিদার বাড়ি থেকে তাদের তৈরি করা সুইচ্চ স্তম্ভ লোহাগড় মঠ সকলের কাছে বেশ পরিচিত। যেখানে প্রতিনিয়ত পর্যটকদের ভিড় হয়ে থাকে।

ইলিশ চত্বরঃ ইলিশ চত্বর হল চাঁদপুর জেলার চাঁদপুর শহরে সড়কের মাঝখানে তৈরিকৃত একটি চত্বর।[১] চাঁদপুর স্টেডিয়াম, পৌর বাস স্ট্যান্ড এবং সরকারি অফিসার্স কোয়াটারের ত্রিমূখী রাস্তার মিলন স্থলে চাঁদপুরের এই ঐতিহ্যকে প্রতীকী উপস্থাপনের নিমিত্ত চাঁদপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে স্থাপিত একটি দৃষ্টিনন্দন ও চমৎকার ভাস্কর্য যা ইলিশ চত্বর নামে পরিচিত।

রূপসা জমিদার বাড়িঃ জমিদার বাড়ির সামনে বিশাল মাঠ। জমিদার বাড়িতে ইট দিয়ে তৈরি করা মোট তিনটি ভবন আছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে মূল ভবন, আর একটি আছে মুল ভবনের বাম পাশে এবং আরেকটি আছে মূল ভবনের পিছনে। এছাড়াও আছে ঢেউটিন দিয়ে তৈরি করা তিনটি ঘর। জমিদার বাড়িতে ঢুকার পথে ডানপাশে আছে জমিদার বাড়ির মসজিদ এবং জমিদার বাড়ির কবরস্থান। আর ঘাটবাঁধানো একটি বিশাল পুকুর ও জমিদার বাড়ির প্রবেশদ্বার।

দেশের অন্যান্য জেলার বেশিরভাগ জমিদার বাড়িই অযত্ন ও অবহেলার কারণে প্রায় ধ্বংসের মুখে। কিন্তু বাংলাদেশের এই রূপসা জমিদার বাড়ি এখনো প্রায় আগের মতই আছে। রূপসা জমিদার বাড়িতে প্রবেশ পথে একটি গেইট রয়েছে, ভিতরে একটি মসজিদ, জমিদার পরিবারবর্গের একটি কবরস্থান, একটি কাছারি ঘর রয়েছে।

এছাড়াও শোল্লা জমিদার বাড়ি, বলাখাল জমিদার বাড়ি, বড়কুল জমিদার বাড়ি, বোয়ালিয়া জমিদার বাড়ি, কড়ৈতলী জমিদার বাড়ি, লুধুয়া জমিদার বাড়ি, গজরা জমিদার বাড়ি, চৌধুরী বাড়ি, সাহাপুর রাজবাড়ি, হামিদ মিয়া জমিদার বাড়ি ও রামচন্দ্রপুর বড় পাটওয়ারী বাড়ী (ডাকাতিয়া নদী সংলগ্ন) দর্শনীয় স্থান হিসেবে উল্লেখযোগ্য।

স্মৃতিসৌধ সমূহের মধ্যে অঙ্গীকার স্মৃতিসৌধ, রক্তধারা স্মৃতিসৌধ এরপর শহীদ রাজু ভাস্কর্য, ওনুয়া স্মৃতি ভাস্কর্য ও দীপ্ত বাংলা (মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য), পর্তুগীজ দুর্গ, সাহেবগঞ্জ, ফাইভ স্টার পার্ক, জজ নগর (Judge Nagar) শামীমা রাতুল শিশু পার্ক ও মিনি জো (পৌর পার্ক), বোটানিকাল গার্ডেন, মত্‍স্য জাদুঘর, শিশু পার্ক, গুরুর চর, কালীবাড়ী মন্দির, ধানুয়া মিনি হাওর (ধানুয়া-গাজীপুর ব্রিজ), শপথ চত্বর, রাগৈ মুঘল আমলের ৩ গম্বুজ মসজিদ, বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্র, বড়স্টেশন মোলহেড বা তিন নদীর মোহনা (চাঁদপুর সদর), মোহনপুর পর্যটন লিমিটেড, টরকী বকুল তলা এবং ষাটনল পর্যটন কেন্দ্র পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
চাঁদপুর যেতে চাইলে জেলার আওতাধীন ২০৩ কিঃ মিঃ নৌপথ রয়েছে, যা দিয়ে বিপুল সংখ্যক যাত্রী ও বিপুল পরিমাণ পণ্য পরিবহন করা হয়। স্থলপথে ঢাকা থেকে চাঁদপুরের উদ্দেশ্য যেসব গাড়ি ছেড়ে যায় সেগুলোর মধ্যে পদ্মা এক্সপ্রেস ও মতলব এক্সপ্রেস অন্যতম এবং জল পথে ঢাকা সদরঘাট নদী বন্দর লঞ্চ টার্মিনাল থেকে চাঁদপুরের উদ্দেশ্য যে কয়েকটি লঞ্চ ছেড়ে যায় তার মধ্যে আব-এ-জমজম, রফ রফ, ময়ূর-১, ময়ূর-২, আল বোরাক, মেঘনা রাণী, ইমাম হাসান ইত্যাদি লঞ্চসেবার নাম উল্লেখযোগ্য।
ইলিশ চাঁদপুরের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সুপরিচিত খাবার। লঞ্চ থেকে নেমে ঘাটের পাশে, শহরের ভেতর কালীবাড়ি মোড়ে, হকার্স মার্কেটের সামনে এবং বাস স্ট্যান্ডে ঢোকার মুখে বেশ কিছু খাবার হোটেল আছে। এগুলোতে ইলিশ সহ তিন বেলার ভারী খাবার বা নাস্তা পাওয়া যায়। হোটেলগুলোর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হচ্ছে (স্টেডিয়ামের পাশে) ইলিশ চত্বরের ‘ক্যাফে ঝীল’। চাঁদপুরের মিষ্টিও অত্যন্ত সুস্বাদু। উল্লেখযোগ্য নামের মধ্যে আছে কালীবাড়ি মোড়ে ‘ওয়ান মিনিট’, পাল বাজারের পাশে ‘সুইট হোম’, জোড় পুকুর পাড় এবং ইলিশ চত্ত্বরে ‘মৌসুমী সুইটস্‌’। শহরের বাইরে ফরিদগঞ্জ বাজারে আছে ‘আউয়ালের মিষ্টি’, আর মতলব বাজারে আছে ‘গান্ধী ঘোষ’। শাপলা চত্ত্বর থেকে সিএনজি কিংবা বাস-স্ট্যান্ড থেকে বাসে করে ফরিদগঞ্জ যাওয়া যায়, ভাড়া ৩০-৫০ টাকা। মতলব যাওয়ার জন্যও শাপলা চত্ত্বর থেকে সিএনজি পাওয়া যাবে, ভাড়া ৩০-৪০ টাকা। যেতে সময় সর্বোচ্চ একঘন্টা লাগতে পারে। চটপটি-ফুঁচকা, ঝালমুড়ি ইত্যাদী পাওয়া যাবে মাতৃপীঠ স্কুলের সামনে হ্রদের পাড়ে, পাল বাজার ব্রীজের উপরে, ঠোডায় (ডাকাতিয়া ও পদ্মা-মেঘনার সংযোগস্থল)। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য পাল বাজার ব্রীজের উপরের ‘বিসমিল্লাহ ঝালমুড়ি’।
সব খাওয়া-দাওয়ার মাঝখানে সন্ধ্যায় নদীর পাড়ে বসে এক কাপ পুদিনা পাতা দেয়া লাল চা খেতে চাইলে যেতে পারেন প্রেস ক্লাবের পাশে ‘গুরুর দোকানে’।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com

ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর

আপডেট সময় : ০৫:৩৩:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

নাগরিক প্রতিদিন এর আজকের আয়োজনে রয়েছে চাঁদপুর জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। উপজেলার সংখ্যানুসারে চাঁদপুর বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণিভুক্ত জেলা। পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থলে এ জেলা অবস্থিত। ইলিশ মাছের অন্যতম প্রজনন অঞ্চল হিসেবে চাঁদপুরকে “ইলিশের বাড়ি” নামে ডাকা হয়। রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ৯৬ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ২০৮ কিলোমিটার। এ জেলার দক্ষিণে লক্ষ্মীপুর জেলা ও নোয়াখালী জেলা; পূর্বে কুমিল্লা জেলা, উত্তরে কুমিল্লা জেলা, মেঘনা নদী ও মুন্সীগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে মেঘনা নদী, মুন্সীগঞ্জ জেলা, শরীয়তপুর জেলা ও বরিশাল জেলা অবস্থিত। পদ্মা ও মেঘনা নদী দুটি চাঁদপুর শহরের কাছে এসে মিলেছে।
১৮৭৮ সালে ত্রিপুরা জেলা (পরবর্তীতে যা কুমিল্লা নামে পরিচিত) যে তিনটি মহকুমা নিয়ে গঠিত হয়, তার মধ্যে চাঁদপুর অন্যতম। ১৯৮৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুর জেলায় উন্নীত হয়।
বার ভূঁইয়াদের আমলে চাঁদপুর অঞ্চল বিক্রমপুরের জমিদার চাঁদরায়ের দখলে ছিল। এ অঞ্চলে তিনি একটি শাসনকেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। ঐতিহাসিক জে এম সেনগুপ্তের মতে, চাঁদরায়ের নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম হয়েছে চাঁদপুর।
অন্যমতে, চাঁদপুর শহরের (কোড়ালিয়া) পুরিন্দপুর মহল্লার চাঁদ ফকিরের নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম চাঁদপুর। কারো মতে, শাহ আহমেদ চাঁদ নামে একজন প্রশাসক দিল্লী থেকে পঞ্চদশ শতকে এখানে এসে একটি নদী বন্দর স্থাপন করেছিলেন। তার নামানুসারে নাম হয়েছে চাঁদপুর।
মুক্তিযুদ্ধের সময় চাঁদপুর ২নং সেক্টরের অধীনে ছিল। মুক্তিযুদ্ধের স্মারক হিসেবে অঙ্গীকার (ভাস্কর্য), ফরিদগঞ্জ উপজেলার শহীদদের নাম ও ঠিকানা উৎকীর্ণ স্মৃতিফলক আমরা তোমাদের ভুলব না, মতলবের দীপ্ত বাংলাদেশ, চান্দ্রাকান্দি স্মৃতিসৌধ (সাদুল্লাহপুর, মতলব)। রঘুনাথপুর বাজার (হাজীগঞ্জ), হামিদিয়া জুট মিলস প্রাঙ্গণ, রায়শ্রী উত্তর ও দক্ষিণে বধ্যভূমি এবং গণকবর আছে নাসিরকোট (হাজীগঞ্জ)।
দেশ-বিদেশে চাঁদপুরকে বিশেষভাবে উপস্থাপনের জন্য ২০১৫ সালের আগস্ট মাস হতে জেলা ব্র্যান্ডিং কার্যক্রম শুরু করেন তৎকালিন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুস সবুর মণ্ডল। ইলিশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এর ব্র্যান্ডিং নাম দেন ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর । ২০১৭ সালে বাংলাদেশের প্রথম ব্র্যান্ডিং জেলা হিসেবে চাঁদপুরকে স্বীকৃতি দেয়। এ নামানুসারে একটি লোগো রয়েছে, যা অঙ্কন করেছেন এ জেলার সন্তান বরেণ্য চিত্রশিল্পী হাশেম খান। একইসাথে ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর এর রূপকার হিসেবে স্বীকৃতি পান তৎকালিন (২০১৫-২০১৮) জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুস সবুর মণ্ডল।
চাঁদপুর জেলা নদীর জেলা হিসেবে পরিচিত। এখানে জালের মতো বিস্তৃত আছে অনেক নদী। এ জেলার প্রধান ৪টি নদী হল মেঘনা, পদ্মা, ডাকাতিয়া ও ধনাগোদা নদী। চাঁদপুর জেলায় যোগাযোগের প্রধান সড়ক হল ঢাকা-চাঁদপুর মহাসড়ক এবং চট্টগ্রাম-চাঁদপুর মহাসড়ক। শুধুমাত্র চাঁদপুর জেলার জন্য আলাদা একটি রেলপথ রয়েছে, যার মাধ্যমে প্রতিদিন চাঁদপুর-চট্টগ্রাম এবং চাঁদপুর-কুমিল্লার আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন জেলা শহর থেকে নৌপথে যোগাযোগের জন্যে রয়েছে চাঁদপুর নদী বন্দর।

চাঁদপুর জেলার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ

মিনি কক্সবাজার, চাঁদপুরঃ মেঘনার চর বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলায় রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত একটি পর্যটনকেন্দ্র। এটি নদীকেন্দ্রিক বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যটন কেন্দ্র। এর চারদিকে নদী হওয়ায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মতো দেখায় তাই পর্যটকরা এর নাম দিয়েছেন মেঘনার চর। স্থানীয়ভাবে বালু চর, পদ্মার চর ও মেঘনার চর নামেও এর পরিচিতি রয়েছে। বেসরকারিভাবে “স্বপ্ন ট্যুরিজম” নামক প্রতিষ্ঠান এই পর্যটনকেন্দ্রটি পরিচালনা করে।
চারদিকে নদী ও দূর থেকে স্থানটি দক্ষিণ পূর্বাংশে চাঁদপুর জেলা শহরকে এবং এর বিপরীত দিকে ছোট আকৃতিতে শরীয়তপুর জেলাকে অনুধাবন করা পর্যটন কেন্দ্রের বিশেষ আকর্ষণ। শীত মৌসুমে এবং গ্রীষ্মের আগ পর্যন্ত এ পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের মন কাড়ে] এ স্থানটি পদ্মা ও মেঘনার মিলনস্থলে অবস্থান হওয়া দু’দিকে মেঘনা ও পদ্মার বিস্তীর্ণ জলরাশির ছোট ছোট ঢেউ আর বালুকাময় বিস্তীর্ণ চরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা এখানে ভিড় করে। সকালে বা বিকেলে এসে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উভয়টির দৃশ্যই এখান থেকে দেখা যায়। দু’দিক থেকে দু’নদীর ছোট ছোট ঢেউ আছড়ে পড়া, পদ্মা-মেঘনায় জেলেদের ইলিশ ধরার দৃশ্য আর বিস্তীর্ণ বালির ফাঁকে সবুজ ঘাস মিনি কক্সবাজার বিশেষ সৌন্দর্য। এছাড়া জনপ্রিয় স্থানটিতে পর্যটকদের জন্যে মেঘনা ও পদ্মা নদীর মিঠা পানিতে সাঁতারের পাশাপাাশি ও গোসলের সুযোগ রয়েছে।
বর্ষার সময় সাঁতার না-জানা পর্যটকদের জন্য মিনি কক্সবাজার ঝুঁকিপূর্ণ। ১২ জুন ২০১৯ তারিখে এখানে সাঁতার কাটতে গিয়ে একজন পর্যটক নিখোঁজ হন।১৩ জুন ২০১৯ তারিখে চাঁদপুর নদী ফায়ার সার্ভিস, বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ড সদস্যরা তার লাশ উদ্ধার করে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এ পর্যটনকেন্দ্রকে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের জন্যেও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখছে।

হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ (৬ষ্ঠ বৃহত্তম)ঃ হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ এর অবস্থান চাঁদপুর জেলার উপজেলার হাজীগঞ্জ বাজারের মধ্যবর্তী স্থানে। এটি হাজীগঞ্জ মৌজায় পড়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে আলীয়া মাদ্রাসা, হাফেজীয়া মাদ্রাসা, ফোরকানীয়া মাদ্রাসা ও ইসলামীয়া পাঠাগার। মসজিদটি দুই তলা বিশিষ্ট, ১টি 121 ফুট লম্বা মিনার ও ২টি গুম্বজ রয়েছে।

হযরত শাহরাস্তি (রহ.) এর মাজারঃ চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলাধীন শ্রীপুর গ্রামে হযরত রাস্তি শাহ্‌ (রহ.)-এর মাজার অবস্থিত।
মাজার সংলগ্ন একটি অতি প্রাচীন তিন গম্বুজ মসজিদ রয়েছে। রাস্তি শাহের মৃত্যুর সাড়ে তিনশ’ বছর পর সুবেদার শায়েস্তা খানের কন্যা পরী বিবির আদেশে কাজী গোলাম রসুল এটি নির্মাণ করেন। সম্রাটফিরোজ শাহ তুঘলক (১৩৫১-১৩৮৮)-এর আমলে মাজারের ব্যয় নির্বাহ করার জন্য সরকার ৬৪ একর সম্পত্তি লাখেরাজ দান করেন; যা শ্রীপুরে তার বংশধরগণ বংশ পরম্পরায় দেখাশুনা করে আসছেন। মাজার রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্যে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বার্ষিক দু’শ’ দশ টাকা হারে অনুদান (ভাতা) দিতো; তবে পরবর্তীতে কুমিল্লার ডিএম (ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট) হেনরী মেডকাফের সাথে রাস্তি শাহের উত্তরসুরি গোলাম রেজার বিরোধ সৃষ্টি হলে তা বন্ধ হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে তা মীমাংসা হলে তখন থেকে অদ্যাবধি তার বংশধরগণ সরকার থেকে দু’শ দশ টাকা হারে বার্ষিক ভাতা পান।
প্রতি বছর মাঘ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার এখানে বার্ষিক সম্মেলন (ওরস) অনুষ্ঠিত হয়; যাতে দেশ-বিদেশ হতে প্রচুর লোক সমাগম ঘটে।

সাচার রথঃ সাচার কচুয়ার রথটি অতি প্রাচীন।সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিকট তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। প্রতিবছর এই রথকে কেন্দ্র করে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এটি বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার সাচার বাজারে অবস্থিত।অলৌকিক ভাবে দর্শন প্রাপ্ত এ নিম কাঠ দ্বারা জগ্ননাথ, বলরাম ও শুভদ্রা এ তিনজনের তিনটি মূর্তি তৈরি হয়। গঙ্গা গোবিন্দ সেনের নেতৃত্বে তৎকালীন বঙ্গের বিখ্যাত নির্মাতা কারিগর রামকান্ত নিম কাঠ খোদাই পদ্ধতিতে মূর্তি গুলো তৈরি করেন। বলরাম জগন্নাথের বড় ভাই এবং শুভদ্রা ছোট বোন। জগন্নাথ ধামের ক’গজ সম্মূখে নিম কাঠের সাহায্যেই ১২টি চাকার উপর প্রায় ৪০ ফুট উচুঁ বিশিষ্ট অভিনব কারুকার্য খচিত রথ নির্মিত হয়। নিম কাঠে খোদাই পদ্ধতিতে বিভিন্ন আকর্ষনীয় মূর্তি তৈরি করা হয়। এসব মূর্তির মাঝে চুল বেঁধে রেখে বউ কে কাধে তুলে রাখা, পুরুষের প্রস্রাব পানে উদ্যত্ব যুবতী ষাড়ের উপর গাভী চড়ায় ও মাকে ছেলে ধর্ষন করছে ইত্যাদি নিখুত মূর্তি গুলো সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। অর্থ্যাৎ সত্য, দ্বাপর ত্রেতা ও কলিযুগের ঘটমান মানুষের আচরনের বিভিন্ন অঙ্কিত স্মৃতি নিয়ে এ রথ নির্মিত হয়।

মনসা মুড়াঃ মনসা মুড়াটি চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার ৪নং পূর্ব সহদেবপুর ইউনিয়নের ভূইয়ারা গ্রামে অবস্থিত। ভুইয়ারা হাইস্কুল হতে প্রায় ৩০০ মিটার পূর্বে কচুয়া-সাচার সড়ক হতে অর্ধ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং সুন্দরী খালের উত্তর পাশে খোলা মাঠে অবস্থিত ২১টি বাঁশ ঝাড় নিয়ে গঠিত এই মনসা মুড়াটিকে পরিকল্পিত বাগান বলে মনে হয়। জনশ্রুতি রয়েছে, বাসর ঘরে সর্প দংশনের পর মৃত স্বামী লক্ষীন্দরকে সাগরে ভেলায় ভাসিয়ে চলার পথে এক পর্যায়ে ভেলাটি ভুইয়ারা গ্রামে ভিড়ে (ভুইয়ারা গ্রাম এককালে উপকূল এলাকা ছিল বলে কথিত রয়েছে)। সেই ভেলায় ব্যবহৃত কাঁচা বাঁশ থেকে শিস বেরিয়ে বর্তমানের এ মনসা মুড়ার সৃষ্টি হয়। জানা গেছে, এলাকার হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোকজন বিভিন্ন উদ্দেশ্য সফল করতে এ মনসা মুড়ায় দুধ ও কলা দিয়ে থাকে (মানত্ করে)। একসময় ভুইয়ারা গ্রামের লোদ বংশীয় লোকেরা মনসা মুড়ার রক্ষণাবেক্ষণসহ পূজা-অর্চনা করত। ১৯৬৮ সালে এই বংশের লোকজন ভারতে চলে যাওয়ার সময় পাশের মেঘদাইর গ্রামের গোবিন্দ কবিরাজের স্ত্রী যমুনা সুন্দরীকে মনসা মুড়া রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়ে যায়। এর পর যমুনা সুন্দরীর তিরোধানের পর তার পুত্রবধূ নীলা চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে এ মনসা মুড়ায় পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে

মেঘনা নদীর তীরঃ মেঘনা নদী বা মেঘনা আপার নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, ভোলা এবং লক্ষ্মীপুর জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৫৬ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৩৪০০ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। মেঘনা চাঁদপুরের মোহনা থেকে শুরু করেই সবথেকে বেশী খরস্রোতা হয়েছে এবং মেঘনা ভোলার শুরু থেকে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত প্রায় ১০০কি:মি: প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক মেঘনা আপার নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ১৭। মেঘনা বাংলাদেশের গভীরতম ও প্রশস্ততম নদী এবং অন্যতম বৃহৎ ও প্রধান নদী।

লোহাগড় মঠঃ লোহাগড় মঠ হল বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলায় অবস্থিত একমাত্র মঠ।[১] প্রায় চার থেকে সাত শতাব্দী পুরাতন প্রাচীন এই মঠ চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার লোহাগড় গ্রামে ডাকাতিয়া নদীর পাশে অবস্থিত। যা লোহাগড় জমিদার বাড়ির জমিদাররা তৈরি করেছিলেন। দর্শনীয় স্থান হিসেবে তুলাতুলী মঠ, নাওড়া মঠ, মঠখোলার মঠ, যাত্রা মুনির মঠ, সত্যরাম মজুমদারের মঠ উল্লেখযোগ্য।

লোহাগড় জমিদার বাড়িঃ লোহাগড় জমিদার বাড়ি বাংলাদেশ এর চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার লোহাগড় গ্রামে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। তবে এই জমিদার বাড়ির জমিদারদের তৈরি করা জমিদার বাড়ি থেকে তাদের তৈরি করা সুইচ্চ স্তম্ভ লোহাগড় মঠ সকলের কাছে বেশ পরিচিত। যেখানে প্রতিনিয়ত পর্যটকদের ভিড় হয়ে থাকে।

ইলিশ চত্বরঃ ইলিশ চত্বর হল চাঁদপুর জেলার চাঁদপুর শহরে সড়কের মাঝখানে তৈরিকৃত একটি চত্বর।[১] চাঁদপুর স্টেডিয়াম, পৌর বাস স্ট্যান্ড এবং সরকারি অফিসার্স কোয়াটারের ত্রিমূখী রাস্তার মিলন স্থলে চাঁদপুরের এই ঐতিহ্যকে প্রতীকী উপস্থাপনের নিমিত্ত চাঁদপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে স্থাপিত একটি দৃষ্টিনন্দন ও চমৎকার ভাস্কর্য যা ইলিশ চত্বর নামে পরিচিত।

রূপসা জমিদার বাড়িঃ জমিদার বাড়ির সামনে বিশাল মাঠ। জমিদার বাড়িতে ইট দিয়ে তৈরি করা মোট তিনটি ভবন আছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে মূল ভবন, আর একটি আছে মুল ভবনের বাম পাশে এবং আরেকটি আছে মূল ভবনের পিছনে। এছাড়াও আছে ঢেউটিন দিয়ে তৈরি করা তিনটি ঘর। জমিদার বাড়িতে ঢুকার পথে ডানপাশে আছে জমিদার বাড়ির মসজিদ এবং জমিদার বাড়ির কবরস্থান। আর ঘাটবাঁধানো একটি বিশাল পুকুর ও জমিদার বাড়ির প্রবেশদ্বার।

দেশের অন্যান্য জেলার বেশিরভাগ জমিদার বাড়িই অযত্ন ও অবহেলার কারণে প্রায় ধ্বংসের মুখে। কিন্তু বাংলাদেশের এই রূপসা জমিদার বাড়ি এখনো প্রায় আগের মতই আছে। রূপসা জমিদার বাড়িতে প্রবেশ পথে একটি গেইট রয়েছে, ভিতরে একটি মসজিদ, জমিদার পরিবারবর্গের একটি কবরস্থান, একটি কাছারি ঘর রয়েছে।

এছাড়াও শোল্লা জমিদার বাড়ি, বলাখাল জমিদার বাড়ি, বড়কুল জমিদার বাড়ি, বোয়ালিয়া জমিদার বাড়ি, কড়ৈতলী জমিদার বাড়ি, লুধুয়া জমিদার বাড়ি, গজরা জমিদার বাড়ি, চৌধুরী বাড়ি, সাহাপুর রাজবাড়ি, হামিদ মিয়া জমিদার বাড়ি ও রামচন্দ্রপুর বড় পাটওয়ারী বাড়ী (ডাকাতিয়া নদী সংলগ্ন) দর্শনীয় স্থান হিসেবে উল্লেখযোগ্য।

স্মৃতিসৌধ সমূহের মধ্যে অঙ্গীকার স্মৃতিসৌধ, রক্তধারা স্মৃতিসৌধ এরপর শহীদ রাজু ভাস্কর্য, ওনুয়া স্মৃতি ভাস্কর্য ও দীপ্ত বাংলা (মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য), পর্তুগীজ দুর্গ, সাহেবগঞ্জ, ফাইভ স্টার পার্ক, জজ নগর (Judge Nagar) শামীমা রাতুল শিশু পার্ক ও মিনি জো (পৌর পার্ক), বোটানিকাল গার্ডেন, মত্‍স্য জাদুঘর, শিশু পার্ক, গুরুর চর, কালীবাড়ী মন্দির, ধানুয়া মিনি হাওর (ধানুয়া-গাজীপুর ব্রিজ), শপথ চত্বর, রাগৈ মুঘল আমলের ৩ গম্বুজ মসজিদ, বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্র, বড়স্টেশন মোলহেড বা তিন নদীর মোহনা (চাঁদপুর সদর), মোহনপুর পর্যটন লিমিটেড, টরকী বকুল তলা এবং ষাটনল পর্যটন কেন্দ্র পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
চাঁদপুর যেতে চাইলে জেলার আওতাধীন ২০৩ কিঃ মিঃ নৌপথ রয়েছে, যা দিয়ে বিপুল সংখ্যক যাত্রী ও বিপুল পরিমাণ পণ্য পরিবহন করা হয়। স্থলপথে ঢাকা থেকে চাঁদপুরের উদ্দেশ্য যেসব গাড়ি ছেড়ে যায় সেগুলোর মধ্যে পদ্মা এক্সপ্রেস ও মতলব এক্সপ্রেস অন্যতম এবং জল পথে ঢাকা সদরঘাট নদী বন্দর লঞ্চ টার্মিনাল থেকে চাঁদপুরের উদ্দেশ্য যে কয়েকটি লঞ্চ ছেড়ে যায় তার মধ্যে আব-এ-জমজম, রফ রফ, ময়ূর-১, ময়ূর-২, আল বোরাক, মেঘনা রাণী, ইমাম হাসান ইত্যাদি লঞ্চসেবার নাম উল্লেখযোগ্য।
ইলিশ চাঁদপুরের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সুপরিচিত খাবার। লঞ্চ থেকে নেমে ঘাটের পাশে, শহরের ভেতর কালীবাড়ি মোড়ে, হকার্স মার্কেটের সামনে এবং বাস স্ট্যান্ডে ঢোকার মুখে বেশ কিছু খাবার হোটেল আছে। এগুলোতে ইলিশ সহ তিন বেলার ভারী খাবার বা নাস্তা পাওয়া যায়। হোটেলগুলোর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হচ্ছে (স্টেডিয়ামের পাশে) ইলিশ চত্বরের ‘ক্যাফে ঝীল’। চাঁদপুরের মিষ্টিও অত্যন্ত সুস্বাদু। উল্লেখযোগ্য নামের মধ্যে আছে কালীবাড়ি মোড়ে ‘ওয়ান মিনিট’, পাল বাজারের পাশে ‘সুইট হোম’, জোড় পুকুর পাড় এবং ইলিশ চত্ত্বরে ‘মৌসুমী সুইটস্‌’। শহরের বাইরে ফরিদগঞ্জ বাজারে আছে ‘আউয়ালের মিষ্টি’, আর মতলব বাজারে আছে ‘গান্ধী ঘোষ’। শাপলা চত্ত্বর থেকে সিএনজি কিংবা বাস-স্ট্যান্ড থেকে বাসে করে ফরিদগঞ্জ যাওয়া যায়, ভাড়া ৩০-৫০ টাকা। মতলব যাওয়ার জন্যও শাপলা চত্ত্বর থেকে সিএনজি পাওয়া যাবে, ভাড়া ৩০-৪০ টাকা। যেতে সময় সর্বোচ্চ একঘন্টা লাগতে পারে। চটপটি-ফুঁচকা, ঝালমুড়ি ইত্যাদী পাওয়া যাবে মাতৃপীঠ স্কুলের সামনে হ্রদের পাড়ে, পাল বাজার ব্রীজের উপরে, ঠোডায় (ডাকাতিয়া ও পদ্মা-মেঘনার সংযোগস্থল)। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য পাল বাজার ব্রীজের উপরের ‘বিসমিল্লাহ ঝালমুড়ি’।
সব খাওয়া-দাওয়ার মাঝখানে সন্ধ্যায় নদীর পাড়ে বসে এক কাপ পুদিনা পাতা দেয়া লাল চা খেতে চাইলে যেতে পারেন প্রেস ক্লাবের পাশে ‘গুরুর দোকানে’।